যারা পরপোকার করে তাদের জন্য আছে শান্তি ...

Google Ads

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا أَنَّ رَجُلاً جَاءَ إِلَى رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ يَا رَسُوْلَ اللهِ أَيُّ النَّاسِ أَحَبُّ إِلَى اللهِ؟ فَقَالَ أَحَبُّ النَّاسِ إِلَى اللهِ أَنْفَعُهُمْ لِلنَّاسِ، وَأَحَبُّ الْأَعْمَالِ إِلَى اللهِ سُرُورٌ تُدْخِلُهُ عَلَى مُسْلِمٍ أَوْ تَكْشِفُ عَنْهُ كُرْبَةً أَوْ تَقْضِى عَنْهُ دَيْناً أَوْ تَطْرُدُ عَنْهُ جُوْعاً، وَلأَنْ أَمْشِىَ مَعَ أَخِى الْمُسْلِمِ فِى حَاجَةٍ أَحَبُّ إِلَىَّ مِنْ أَنْ أَعْتَكِفَ فِى هَذَا الْمَسْجِدِ يَعْنِيْ مَسْجِدَ الْمَدِيْنَةِ شَهْرًا، وَمَنْ كَفَّ غَضْبَهُ سَتَرَ اللهُ عَوْرَتَهُ وَمَنْ كَظَمَ غَيْظَهُ وَلَوْ شَاءَ أَنْ يُّمْضِيَهُ أَمْضَاهُ مَلَأَ اللهُ قَلْبَهُ رِضًا يَّوْمَ الْقِيَامَةِ، وَمَنْ مَّشَى مَعَ أَخِيْهِ الْمُسْلِمِ فِى حَاجَةٍ حَتَّى يَقْضِيَهَا لَهُ أَثْبَتَ اللهُ قَدَمَهُ يَوْمَ تَزِلُّ الْأَقْدَامُ، وَإِنَّ سُوءَ الْخُلُقِ يُفْسِدُ الْعَمَلَ كَمَا يُفْسِدُ الْخَلُّ الْعَسَلَ-

প্রত্যেক মুমিনই আল্লাহর নিকট প্রিয় হ'তে চায়। কিন্তু প্রকৃত অর্থে কে আল্লাহর নিকট সর্বাধিক প্রিয়, এমন এক প্রশ্নের উত্তরে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,

(১) আল্লাহর নিকট সেই ব্যক্তি সবচেয়ে প্রিয় যে মানুষের সবচেয়ে বেশী উপকার করে। (২) আল্লাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয় নেক আমল হ'ল কোন মুসলিমকে আনন্দিত করা অথবা তার কোন বিপদ, কষ্ট বা উৎকণ্ঠা দূর করা, অথবা তার ঋণ পরিশোধ করে দেওয়া অথবা তার ক্ষুধা দূর করা। তিনি বলেন, (৩) আমার কোন ভাইয়ের সাহায্যের জন্য তার সাথে হেঁটে যাওয়া আমার নিকট এই মসজিদে (মসজিদে নববীতে) এক মাস ই'তেকাফ করার চেয়েও প্রিয়। (৪) যে ব্যক্তি তার ক্রোধ সংবরণ করবে, আল্লাহ তার দোষ-ত্রুটি গোপন রাখবেন। নিজের ক্রোধ কার্যকর করার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও যে ব্যক্তি তা দমন করবে, ক্বিয়ামতের দিন মহান আল্লাহ তার হৃদয়কে সন্তুষ্টি দিয়ে ভরে দিবেন। (৫) যে ব্যক্তি তার কোন ভাইয়ের সাথে গিয়ে তার কোন প্রয়োজন মিটিয়ে দিবে, ক্বিয়ামতের কঠিন দিনে যেদিন পুলছিরাতের উপর সকলের পা পিছলে যাবে, সেদিন আল্লাহ তার পা দৃঢ় রাখবেন। তিনি বলেন, (৬) সিরকা যেমন মধুকে নষ্ট করে দেয়, মন্দ আচরণ তেমনি মানুষের সৎকর্ম সমূহ বিনষ্ট করে দেয়'।[1]

উপরোক্ত হাদীছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, ব্যক্তি কল্যাণ ও সমাজ কল্যাণের ছোট-খাট বিষয়েও মুমিনকে সজাগ থাকতে হবে। অনেকের জ্ঞান আছে, কিন্তু হুঁশ নেই। এদের অসতর্কতার জন্যই পরিবারে, সমাজে ও সংগঠনে বিশৃংখলা সৃষ্টি হয় ও ক্ষতি হয়।

অত্র হাদীছে ৬টি বিষয় বলা হয়েছে, প্রত্যেকটি বিষয়ে কেবল আল্লাহর নিকটে প্রিয় নয়, বরং তা ব্যক্তির নিজের নিকটে ও সকল মানুষের নিকটে প্রিয়। বর্ণিত ৬টি বিষয়ের মধ্যে প্রথমটি হ'ল, 'যে মানুষের সবচেয়ে বেশী উপকার করে'। এর দ্বারা ন্যায় কাজে উপকার করা বুঝানো হয়েছে, অন্যায় কাজে নয়। যে কাজে কোন ছওয়াব নেই এবং ছওয়াবের আকাঙ্খা নেই, সেকাজ আল্লাহর নিকট প্রিয় নয়। যেমন রাসূল (ছাঃ) বলেন,مَنْ صَامَ رَمَضَانَ إِيمَانًا وَّاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ، وَمَنْ قَامَ رَمَضَانَ إِيمَانًا وَّاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ، مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ- 'যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও ছওয়াবের আশায় রামাযানের ছিয়াম পালন করে, তার বিগত সকল গোনাহ মাফ করা হয় এবং যে ব্যক্তি রামাযানের রাত্রিতে ঈমানের সাথে ও ছওয়াবের আশায় রাত্রির (নফল) ছালাত আদায় করে, তার বিগত সকল (ছগীরা) গোনাহ মাফ করা হয়'।[2]  

إِيمَانًا 'ঈমানের সাথে' অর্থ আল্লাহর উপর পূর্ণ বিশ্বাসের সাথে এবং إِحْتِسَابًا 'ছওয়াবের আশায়' অর্থ পূর্ণ পুরস্কার লাভের আশায়। যে পুরস্কারে সে দৃঢ় আশা পোষণ করবে যে, এর মাধ্যমে আল্লাহ তার বিগত সকল গোনাহ মাফ করে দিবেন। ফলে যে ব্যক্তি গতানুগতিক অভ্যাস বশে অথবা লোক দেখানোর জন্য কিংবা দুনিয়াবী স্বার্থে অন্যের উপকার করে, সে ব্যক্তি আল্লাহর নিকট সর্বাধিক প্রিয় হ'তে পারবেনা। মানুষের জন্য উপকারীদের মর্যাদা সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,مَنْ نَفَّسَ عَنْ مُّؤْمِنٍ كُرْبَةً مِّنْ كُرَبِ الدُّنْيَا نَفَّسَ اللهُ عَنْهُ كُرْبَةً مِّنْ كُرَبِ يَوْمِ الْقِيَامَةِ، وَمَنْ يَّسَّرَ عَلَى مُعْسِرٍ يَسَّرَ اللهُ عَلَيْهِ فِى الدُّنْيَا وَالآخِرَةِ وَمَنْ سَتَرَ مُسْلِمًا سَتَرَهُ اللهُ فِى الدُّنْيَا وَالآخِرَةِ- 'যে ব্যক্তি কোন মুমিনের পার্থিব দুঃখ-কষ্ট দূর করবে, আল্লাহ ক্বিয়ামতে তার দুঃখ-কষ্ট দূর করবেন। যে ব্যক্তি কোন সংকটাপন্ন ব্যক্তির সংকট নিরসন করবে, আল্লাহ তার দুনিয়া ও আখেরাতের যাবতীয় সংকট নিরসন করে দিবেন। আর যে ব্যক্তি কোন মুসলমানের দোষ-ত্রুটি গোপন করবে আল্লাহ দুনিয়া ও আখেরাতে তার দোষ-ত্রুটি গোপন রাখবেন'।[3]

অন্য এক হাদীছে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,أَحَبُّ الأَعْمَالِ إِلَى اللهِ تَعَالَى أَدْوَمُهَا وَإِنْ قَلَّ- 'সেই আমল আল্লাহর অধিক পসন্দনীয় যে আমল নিয়মিতভাবে করা হয়, যদিও তা পরিমাণে কম হয়'।[4]

আল্লাহ বলেন, وَافْعَلُوا الْخَيْرَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ- 'আর তোমরা সৎকর্ম সম্পাদন কর, যাতে তোমরা সফলকাম হ'তে পার' (হজ্জ ২২/৭৭)। তিনি বলেন, وَتَعَاوَنُوا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوَى 'তোমরা সৎকর্ম ও আল্লাহভীতির কাজে পরস্পরকে সহযোগিতা কর' (মায়েদা ৫/২)। আর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ছিলেন মানুষের জন্য সর্বাধিক উপকারী ব্যক্তি। যেমন নুযূলে কুরআনের প্রথম দিনে রাসূল (ছাঃ) ভীত হয়ে বলেছিলেন, 'আমি আমার জীবনের উপর আশঙ্কা করছি। তখন স্ত্রী খাদীজা (রাঃ) তাঁকে বলেন,

كَلاَّ وَاللهِ لاَيُخْزِيْكَ اللهُ اَبَدًا، إِنَّكَ لَتَصِلُ الرَّحِمَ وَتَحْمِلُ الْكَلَّ وَتَكْسِبُ الْمَعْدُوْمَ وَتَقْرِى الضَّيْفَ وَتُعِيْنُ عَلَى نَوَائِبِ الْحَقِّ- 'কখনোই না। আল্লাহর কসম! তিনি কখনোই আপনাকে অপদস্থ করবেন না। আপনি আত্মীয়দের সঙ্গে সদাচরণ করেন, দুস্থদের বোঝা বহন করেন, নিঃস্বদের কর্মসংস্থান করেন, অতিথিদের আপ্যায়ন করেন এবং বিপদগ্রস্তকে সাহায্য করেন'।[5]

(২) 'কোন মুসলিমকে আনন্দিত করা'। যার ব্যাখ্যা এসেছে, 'তার কোন বিপদ, কষ্ট বা উৎকণ্ঠা দূর করা, অথবা তার ঋণ পরিশোধ করে দেওয়া অথবা তার ক্ষুধা দূর করা'। প্রতিটিই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রতিটিই ছাদাক্বা। যার বদলা আল্লাহ আখেরাতে প্রদান করবেন। যেমন হাদীছে এসেছে, 'যে ব্যক্তি কোন মুমিনের দুনিয়ার কষ্টসমূহ হ'তে কোন একটি কষ্ট দূর করে দিবে, আল্লাহ ক্বিয়ামতের দিনের কষ্টসমূহের মধ্য হ'তে তার একটি কষ্ট দূর করে দিবেন। যে ব্যক্তি কোন অভাবগ্রস্ত লোকের অভাব হাল্কা করে দিবে, আল্লাহ দুনিয়া ও আখেরাতে তার অভাব হাল্কা করে দিবেন এবং যে ব্যক্তি কোন মুসলমানের দোষ ঢেকে রাখবে, আল্লাহ দুনিয়া ও আখেরাতে তার দোষ ঢেকে রাখবেন। আল্লাহ তাঁর বান্দার সাহায্যে থাকেন যতক্ষণ সে তার ভাইয়ের সাহায্যে থাকে'।[6]

উপরোক্ত সৎকর্ম সমূহ কেবল মুসলিমকেই আনন্দিত করেনা, বরং যে কোন মানুষকে আনন্দিত করে। যা তার দুনিয়াবী জীবনকে আনন্দময় করে তোলে। বিনিময়ে পরম করুণাময় আল্লাহ তাকে জানণাত দানে আনন্দিত করবেন। বরং কেবল মানুষ নয়, যে কোন জীবন্ত প্রাণীর কষ্ট দূর করে দিলেও আল্লাহ খুশী হন এবং ঐ ব্যক্তিকে সর্বোত্তম পুরস্কারে ভূষিত করেন। যেমন একজন বেশ্যা মহিলা কুয়ায় নেমে তার চামড়ার মোযায় পানি ভরে এনে একটি পিপাসার্ত কুকুরকে পান করায়। তাতে আল্লাহ খুশী হয়ে তাকে জান্নাতে প্রবেশ করান।[7] অন্যদিকে একটি বিড়াল বেঁধে রেখে তাকে খেতে না দিয়ে মেরে ফেলায় ঐ মহিলাকে আল্লাহ জাহান্নামে নিক্ষেপ করেন'।[8] রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, كُلُّ مَعْرُوفٍ صَدَقَةٌ- 'প্রত্যেক সৎকর্মই ছাদাক্বা'।[9] একদিন একদল ছাহাবী বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! ধনী ব্যক্তিরা সব ছওয়াব নিয়ে গেল। তারা ছালাত আদায় করে, যেমন আমরা ছালাত আদায় করি। তারা ছিয়াম পালন করে, যেমন আমরা ছিয়াম পালন করি। তারা তাদের অতিরিক্ত মাল ছাদাক্বা করে। তখন রাসূল (ছাঃ) বলেন, আল্লাহ কি তোমাদের জন্য ছওয়াব নির্ধারণ করেননি, যা তোমরা ছাদাক্বা কর? নিশ্চয় প্রত্যেক তাসবীহর জন্য ছাদাক্বা রয়েছে। প্রত্যেক তাকবীরের জন্য ছাদাক্বা রয়েছে। প্রত্যেক আল-হামদুলিল্লাহর জন্য ছাদাক্বা রয়েছে। প্রত্যেক লা ইলাহা ইল্লাল্লাহর জন্য ছাদাক্বা রয়েছে। সৎকাজের আদেশ দেওয়া ছাদাক্বা, অসৎকাজ থেকে নিষেধ করা ছাদাক্বা এবং স্ত্রীর সঙ্গে মিলনও ছাদাক্বা। ছাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! কেউ যদি স্ত্রী মিলন করে এতেও কি সে ছওয়াব পাবে? তিনি বললেন তোমরা কি মনে কর যদি সে এটি হারাম পথে করে তাতে কি তার পাপ হবেনা? অনুরূপভাবে যদি সে এটি হালাল পথে করে তবে সে ছওয়াব পাবে'।[10]

রাসূল (ছাঃ) একদিন ছাহাবীদের বললেন,مَنْ أَصْبَحَ مِنْكُمُ الْيَوْمَ صَائِمًا؟ قَالَ أَبُو بَكْرٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ أَنَا. قَالَ فَمَنْ تَبِعَ مِنْكُمُ الْيَوْمَ جَنَازَةً؟ قَالَ أَبُو بَكْرٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ أَنَا. قَالَ فَمَنْ أَطْعَمَ مِنْكُمُ الْيَوْمَ مِسْكِينًا؟ قَالَ أَبُو بَكْرٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ أَنَا. قَالَ فَمَنْ عَادَ مِنْكُمُ الْيَوْمَ مَرِيضًا؟ قَالَ أَبُو بَكْرٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ أَنَا. فَقَالَ رَسُولُ اللهِ -صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ- مَا اجْتَمَعْنَ فِى امْرِئٍ إِلاَّ دَخَلَ الْجَنَّةَ- 'তোমাদের মাঝে কে আজ ছিয়ামরত আছে? আবুবকর (রাঃ) বললেন, আমি আছি। তিনি বললেন, তোমাদের মধ্যে কে আজ জানাযার সাথে চলেছ? আবুবকর (রাঃ) বললেন, আমি। তিনি বললেন, তোমাদের মধ্যে কে আজ কোন রোগীর সেবা করেছ? আবুবকর  (রাঃ) বললেন, আমি। তখন রাসুলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, যার মধ্যে এই কাজ সমূহের সমাবেশ ঘটবে সে নিশ্চয়ই জান্নাতে প্রবেশ করবে'।[11]

মুমিন নারীদের সৎকর্ম সম্পাদনের প্রতি উৎসাহ দিয়ে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,يَا نِسَاءَ الْمُسْلِمَاتِ لاَ تَحْقِرَنَّ جَارَةٌ لِّجَارَتِهَا وَلَوْ فِرْسِنَ شَاةٍ- 'হে মুসলিম নারীগণ! এক প্রতিবেশী অন্য প্রতিবেশীকে অল্প পরিমাণ দান করাকে যেন তুচ্ছ মনে না করে, যদিও তা বকরীর একটি ক্ষুরও হয়'।[12]

لاَ تَحْقِرَنَّ مِنَ الْمَعْرُوفِ شَيْئًا وَلَوْ أَنْ تَلْقَى أَخَاكَ بِوَجْهٍ طَلِيقٍ- 'কোন সৎকর্মকেই তুচ্ছ মনে করো না, এমনকি সেটা যদি তোমার ভাইয়ের সাথে হাসিমুখে সাক্ষাৎ করাও হয়'।[13]

নিম্নোক্ত হাদীছে 'কোন মুসলিমকে আনন্দিত করা'র আরও কয়েকটি বিষয় ফুটে উঠেছে। যেমন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন,كُلُّ سُلاَمَى مِنَ النَّاسِ عَلَيْهِ صَدَقَةٌ، كُلَّ يَوْمٍ تَطْلُعُ فِيهِ الشَّمْسُ يَعْدِلُ بَيْنَ الِاثْنَيْنِ صَدَقَةٌ، وَيُعِينُ الرَّجُلَ عَلَى دَابَّتِهِ فَيَحْمِلُ عَلَيْهَا أَوْ يَرْفَعُ عَلَيْهَا مَتَاعَهُ صَدَقَةٌ، وَالْكَلِمَةُ الطَّيِّبَةُ صَدَقَةٌ، وَكُلُّ خَطْوَةٍ يَخْطُوهَا إِلَى الصَّلاَةِ صَدَقَةٌ، وَيُمِيطُ الْأَذَى عَنِ الطَّرِيقِ صَدَقَةٌ- 'যেদিন সূর্য উদিত হয়, সেদিন প্রত্যেক মানুষের প্রত্যেক জোড়ের জন্য ছাদাক্বা করা আবশ্যক। তিনি বলেন, দু'ব্যাক্তির মাঝে ন্যায়বিচার করা ছাদাক্বা। কোন ব্যাক্তিকে তার বাহনের ব্যাপারে সাহায্য করা অথবা তার পণ্য-সামগ্রী তুলে দেওয়া ছাদাক্বা। ভাল কথা বলা ছাদাক্বা, ছালাতের উদ্দেশ্যে প্রতিটি পদক্ষেপ ছাদাক্বা। রাস্তা হ'তে কষ্টদায়ক বস্ত্ত সরিয়ে দেওয়া ছাদাক্বা'।[14] তিনি বলেন, 'আদম সন্তানের প্রত্যেককে ৩৬০টি জোড়ের উপর সৃষ্টি করা হয়েছে। আর প্রত্যেক জোড়ের পক্ষ থেকে ছাদাক্বা করতে হয়। সুতরাং যে ব্যক্তি 'আল্লাহু আকবার' বলল, 'আলহামদুলিল্লাহ' বলল, 'লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ' বলল, 'সুবহানাল্লাহ' বলল, 'আস্তাগফিরুললাহ' বলল, মানুষ চলার রাস্তা থেকে পাথর, কাঁটা অথবা হাড্ডি সরাল কিংবা সৎ কাজের আদেশ করল অথবা অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করল, এবং সব মিলে ৩৬০ সংখ্যার সমপরিমাণ সৎকর্ম করল, সে ঐদিন এমন অবস্থায় সন্ধ্যা করল যে, সে নিজেকে জাহান্নামের আগুন থেকে দূর করে নিল'।[15] রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন,مَا مِنْ مُّسْلِمٍ يَغْرِسُ غَرْسًا أَوْ يَزْرَعُ زَرْعًا فَيَأْكُلُ مِنْهُ إِنْسَانٌ أَوْ طَيْرٌ أَوْ بَهِيمَةٌ إِلاَّ كَانَتْ لَهُ صَدَقَةٌ- 'কোন মুসলিম যদি কোন গাছ লাগায় বা ফসল ফলায়, অতঃপর কোন মানুষ অথবা পশু-পক্ষী তা থেকে কিছু খেয়ে নেয়, তাহ'লে মালিকের জন্য সেটি ছাদাক্বা হবে'।[16]

মুসলমানদের চলাচলের রাস্তা নিরাপদ রাখার মাধ্যমে তাদেরকে আনন্দিত করার প্রতিদান বিষয়ে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন,مَرَّ رَجُلٌ بِغُصْنِ شَجَرَةٍ عَلَى ظَهْرِ طَرِيقٍ فَقَالَ: لِأُنَحِّيَنَّ هَذَا عَنْ طَرِيقِ الْمُسْلِمِينَ لاَ يُؤْذِيهِمْ فَأُدْخِلَ بِهِ الْجَنَّةَ- 'এক ব্যক্তি রাস্তার উপর পড়ে থাকা একটি গাছের ডালের পাশ দিয়ে অতিক্রম করল এবং বলল, আল্লাহর কসম! আমি এটিকে মুসলিমদের পথ থেকে অবশ্যই সরিয়ে দেব, যাতে তাদেরকে কষ্ট না দেয়। তাকে (এর কারণে) জান্নাতে প্রবেশ করানো হ'ল'।[17] ত্বীবী বলেন, এর অর্থ যদি সে ঐ কাজ করে অথবা ঐ কাজ করার নিয়ত করে, তাহ'লে তার সৎ নিয়তের কারণে তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে (মির'আত)। এখানে 'মুসলিমদের পথ' অর্থ জনগণের চলার পথ। যারা মুসলমানদের শত্রু নয়।

জনৈক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকটে এসে আরয করল,

يَا نَبِيَّ اللهِ عَلِّمْنِي شَيْئًا أَنْتَفِعْ بِهِ، قَالَ: اعْزِلِ الْأَذَى عَنْ طَرِيقِ الْمُسْلِمِينَ- 'হে আল্লাহর নবী! আপনি আমাকে এমন কিছু শিক্ষা দিন, যার দ্বারা আমি উপকৃত হ'তে পারি। তিনি বললেন, মুসলমানদের চলার পথ থেকে কষ্টদায়ক বস্ত্ত সরিয়ে দাও'।[18] আরেকদিন মুমিনদের উপকৃত করার নির্দেশনা দিয়ে রাসূল (ছাঃ) বলেন,عَلَى كُلِّ مُسْلِمٍ صَدَقَةٌ قَالُوا: فَإِنْ لَمْ يَجِدْ؟ قَالَ: فَلْيَعْمَلْ بِيَدَيْهِ فَيَنْفَعَ نَفْسَهُ وَيَتَصَدَّقَ قَالُوا: فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ أَوْ لَمْ يَفْعَلْ؟ قَالَ: يُعِينُ ذَا الْحَاجَةِ الْمَلْهُوفَ قَالُوا: فَإِنْ لَمْ يَفْعَلْهُ؟ قَالَ: فَيَأْمُرُ بِالْخَيْرِ قَالُوا: فَإِنْ لَمْ يَفْعَلْ؟ قَالَ: فَيُمْسِكُ عَنِ الشَّرِّ فَإِنَّهُ صَدَقَةٌ- 'প্রত্যেক মুসলিমের উপর ছাদাক্বা দেওয়া কর্তব্য। ছাহাবীগণ আরয করলেন, যদি কারো কাছে ছাদাক্বা করার মতো কিছু না থাকে? তিনি বললেন, তার উচিত হবে নিজ হাতে উপার্জন করা। তাহ'লে সে নিজেও উপকৃত হবে এবং ছাদাক্বাও করতে পারবে। ছাহাবীগণ বললেন, যদি সে সামর্থ্যবান না হয় অথবা নিজ হাতে কাজকর্ম করতে না পারে? তিনি বললেন, সে যেন দুশ্চিন্তাগ্রস্ত কোন মুখাপেক্ষী লোককে সাহায্য করে। ছাহাবীগণ আরয করলেন, যদি এটিও সে না করতে পারে? তিনি বললেন, তাহ'লে সে যেন ভাল কাজের নির্দেশ দেয়। ছাহাবীগণ পুনরায় জানতে চাইলেন, যদি এটিও সে না পারে? রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, তাহ'লে সে মন্দ কাজ হ'তে বিরত থাকবে। এটাই তার জন্য ছাদাক্বা হবে'।[19]

রাসূল (ছাঃ) 'কোন মুসলিমকে আনন্দিত করা'র আরও কতিপয় পদ্ধতি ও তার ছওয়াব উল্লেখ করেছেন। যেমন তিনি বলেন,تَبَسُّمُكَ فِي وَجْهِ أَخِيكَ صَدَقَةٌ وَأَمْرُكَ بِالْمَعْرُوفِ صَدَقَةٌ، وَنَهْيُكَ عَنِ الْمُنْكَرِ صَدَقَةٌ، وَإِرْشَادُكَ الرَّجُلَ فِي أَرْضِ الضَّلاَلِ لَكَ صَدَقَةٌ، وَنَصْرُكَ الرَّجُلَ الرَّدِيءَ الْبَصَرِ لَكَ صَدَقَةٌ، وَإِمَاطَتُكَ الْحَجَرَ وَالشَّوْكَ وَالْعَظْمَ فِي الطَّرِيقِ لَكَ صَدَقَةٌ، وَإِفْرَاغُكَ مِنْ دَلْوِكَ فِي دَلْوِ أَخِيكَ لَكَ صَدَقَةٌ- 'তোমার ভাইয়ের সামনে হাসি মুখে আগমন করা ছাদাক্বা, সৎকাজের আদেশ করা ছাদাক্বা, অসৎ কাজে নিষেধ করা ছাদাক্বা, পথহারা প্রান্তরে কোন মানুষকে রাস্তা বাৎলে দেওয়া তোমার জন্য ছাদাক্বা, কোন অন্ধ বা ক্ষীণ দৃষ্টির মানুষকে সাহায্য করা ছাদাক্বা, পথের কাঁটা বা হাড্ডি সরিয়ে দেওয়া তোমার জন্য ছাদাক্বা, নিজের বালতি থেকে তোমার ভাইয়ের বালতিতে পানি ঢালাও তোমার জন্য ছাদাক্বা'।[20]

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,أَفْضَلُ الْعَمَلِ أَنْ تَدْخًلَ عَلَى أَخِيْكَ الْمُؤْمِنَ سُرُوْرًا أَوْ تَقْضِيْ عَنْهُ دَيْنًا أَوْ تُطْعِمْهُ خُبْزًا- 'সর্বাধিক প্রিয় সৎকর্ম হ'ল তুমি তোমার ভাইয়ের নিকট হাসি মুখে প্রবেশ করবে অথবা তার ঋণ পরিশোধ করে দিবে অথবা তাকে রুটি খাওয়াবে'।[21]

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদের স্ত্রী যয়নব অন্য একজন আনছার মহিলা বেলালের মাধ্যমে রাসূল (ছাঃ)-এর নিকটে প্রশ্ন পাঠাল এই মর্মে যে, তারা তাদের অভাবগ্রস্থ স্বামী ও সন্তানদের ছাদাক্বা দিতে পারবে কি না? জওয়াবে রাসূল (ছাঃ) বলে পাঠালেন, পারবে। তাদের জন্য দু'টি পুরস্কার রয়েছে, لَهُمَا أَجْرَانِ أَجْرُ الْقَرَابَةِ وَأَجْرُ الصَّدَقَةِ- আত্মীয়তা রক্ষার পুরস্কার ও ছাদাক্বার পুরস্কার'।[22] তিনি বলেন, ব্যক্তি তার একটি দীনার পরিবারের জন্য খরচ করে, একটি দীনার আল্লাহর পথে তার বাহনের জন্য খরচ করে, আরেকটি দীনার আল্লাহর পথে তার সাথীদের জন্য ব্যয় করে'।[23] একদিন আয়েশা (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমার দু'জন প্রতিবেশী রয়েছে। এদের কার নিকটে আমি হাদিয়া পাঠাব? তিনি বললেন, তোমার দরজার নিকটবর্তী ব্যক্তি'।[24] রাসূল (ছাঃ) বলেন, মিসকীনকে দান করা একটি ছাদাক্বা। আর রক্ত সম্পর্কীয় আত্মীয়কে দান করা দু'টি ছাদাক্বা। একটি হ'ল ছাদাক্বা, অন্যটি হ'ল আত্মীয়তা রক্ষা'।[25]

(৩) 'কোন ভাইয়ের সাহায্যের জন্য তার সাথে হেঁটে যাওয়া'। বিষয়টি পারস্পরিক সহানুভূতি ও সহমর্মিতার একটি অনন্য দৃষ্টান্ত। এটি ইসলামের অতিথি আপ্যায়নের ও সামাজিক শিষ্টাচারের একটি অতুলনীয় সুন্নাত। অন্যেরাও কমবেশী এটা করে থাকেন। কিন্তু সেখানে ছওয়াবের আকাঙ্খা থাকেনা। ফলে সেটি আল্লাহর নিকটে সর্বাধিক প্রিয় আমলের মধ্যে গণ্য হয়না। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এটিকে মসজিদে নববীতে ই'তিকাফের মত গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতের উপরে অগ্রাধিকার দিয়েছেন। প্রকৃত মুসলিমের কর্তব্য হ'ল ছওয়াবের আকাঙ্খা নিয়ে সুন্নাতটি আমল করা।

(৪) 'যে ব্যক্তি তার ক্রোধ সংবরণ করবে'। এটি খুবই কঠিন। তবে এর পুরস্কারও খুব বেশী। কেননা এর ফলাফল হিসাবে আল্লাহ তার দোষ-ত্রুটি গোপন রাখবেন। অতঃপর ক্রোধ কার্যকর করার শক্তি ও সুযোগ থাকা সত্ত্বেও যে ব্যক্তি তা সংবরণ করবে, ক্বিয়ামতের দিন মহান আল্লাহ তার হৃদয়কে সন্তুষ্টি দিয়ে ভরে দিবেন'। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আরও বলেন,مَنْ كَظَمَ غَيْظًا وَهُوَ يَقْدِرُ عَلَى أَنْ يُّنَفِّذَهُ، دَعَاهُ اللهُ عَلَى رُءُوسِ الْخَلاَئِقِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ حَتَّى يُخَيِّرَهُ فِي أَيِّ الْحُورِ شَاءَ- 'যে ব্যক্তি ক্রোধ সংবরণ করবে অথচ সে তা বাস্তবায়িত করার ক্ষমতা রাখে। আল্লাহ তাকে ক্বিয়ামতের দিন সমস্ত সৃষ্টির সামনে ডেকে এখতিয়ার দিবেন, যেন সে যেকোন হূরকে নিজের জন্য পসন্দ করে নেয়'।[26] আল্লাহ ক্রোধ সংবরণকারীদের 'সৎকর্মশীল' হিসাবে আখ্যায়িত করে  বলেন,وَالْكَاظِمِينَ الْغَيْظَ وَالْعَافِينَ عَنِ النَّاسِ وَاللهُ يُحِبُّ الْمُحْسِنِينَ- 'যারা ক্রোধ দমন করে ও মানুষকে ক্ষমা করে। বস্ত্ততঃ আল্লাহ সৎকর্মশীলদের ভালবাসেন' (আলে ইমরান ৩/১৩৪)

জনৈক ব্যক্তি এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে উপদেশ দিন। তিনি বললেন,لاَ تَغْضَبْ-  'তুমি ক্রুদ্ধ হয়ো না'। কথাটি তিনি তাকে কয়েকবার বললেন।[27] এর অর্থ ক্রোধ হারাম নয়। বরং বাড়াবাড়ি করা নিষিদ্ধ। দ্বীনের স্বার্থে অবশ্যই ক্রুদ্ধ হ'তে হবে ও সবার ঊর্ধ্বে দ্বীনের সম্মান এবং মর্যাদাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। ক্ষেত্র বিশেষে এটি ওয়াজিব হয়ে যায়। যেমন কাফের ও মুনাফিকদের বিরুদ্ধে কঠোর হওয়ার জন্য আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন (তওবা ৯/৭৩, তাহরীম ৬৬/৯)। হোনায়েন যুদ্ধের সংকটকালে যখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর পাশে মুষ্টিমেয় কয়েকজন ব্যতীত কেউ ছিলনা, তখন তিনি স্বীয় সাদা খচ্চরকে কাফের বাহিনীর দিকে এগিয়ে যাবার জন্য উত্তেজিত করতে থাকেন ও বলতে থাকেন, أَنَا النَّبِىُّ لاَ كَذِبْ + أَنَا ابْنُ عَبْدِ الْمُطَّلِبْ 'আমি নবী। মিথ্যা নই'। 'আমি আব্দুল মুত্ত্বালিবের পুত্র'।[28]

হোনায়েন যুদ্ধ শেষে গণীমত বণ্টনের সময় বনু তামীম গোত্রের নওমুসলিম বেদুঈন হুরকূছ বিন যুহায়ের যুল-খুইয়াইছিরাহ নামক জনৈক ব্যক্তি বলে উঠে,يَا مُحَمَّدُ اعْدِلْ. قَالَ: وَيْلَكَ وَمَنْ يَّعْدِلُ إِذَا لَمْ أَكُنْ أَعْدِلُ، لَقَدْ خِبْتَ وَخَسِرْتَ إِنْ لَّمْ أَكُنْ أَعْدِلُ- 'হে মুহাম্মাদ! ন্যায়বিচার করুন! জবাবে রাসূল (ছাঃ) বললেন, তোমার ধ্বংস হৌক! যদি আমি ন্যায়বিচার না করি, তবে কে ন্যায়বিচার করবে? আমি যদি ন্যায়বিচার না করি, তাহ'লে তুমি নিরাশ হবে ও ক্ষতিগ্রস্ত হবে'। তখন ওমর (রাঃ) দাঁড়িয়ে বললেন,دَعْنِى يَا رَسُولَ اللهِ فَأَقْتُلَ هَذَا الْمُنَافِقَ 'হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে ছেড়ে দিন, এই মুনাফিকটার গর্দান উড়িয়ে দিই।[29]

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,لَيْسَ الشَّدِيدُ بِالصُّرَعَةِ إِنَّمَا الشَّدِيدُ الَّذِي يَمْلِكُ نَفْسَهُ عِنْدَ الْغَضَبِ- 'যে অন্যকে কুস্তিতে হারিয়ে দেয়, সে প্রকৃত বীর নয়। বরং প্রকৃত বীর সেই, যে ক্রোধের সময় নিজেকে দমন করতে পারে'।[30] তিনি বলেন,لاَ تَغْضَبْ وَلَكَ الْجَنَّةُ- 'তুমি ক্রোধান্বিত হবেনা, তাহ'লেই তোমার জন্য জান্নাত'।[31] এজন্যেই বলা হয়, 'রেগে গেলে তো হেরে গেলে'।  

(৫) 'যে ব্যক্তি তার কোন ভাইয়ের সাথে গিয়ে তার কোন প্রয়োজন মিটিয়ে দিবে'। এর মাধ্যমে পারস্পরিক সহযোগিতার প্রতি উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। আর এই মহান কাজের বিনিময় সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, 'ক্বিয়ামতের কঠিন দিনে যেদিন পুলছিরাতের উপর সকলের পা পিছলে যাবে, সেদিন আল্লাহ তার পা দৃঢ় রাখবেন'। রাসুল (ছাঃ) অন্য হাদীছে বলেন, 'আল্লাহ বান্দার সাহায্যে অতক্ষণ থাকেন, যতক্ষণ বান্দা তার ভাইয়ের সাহায্যে থাকে'।[32] তিনি আরও বলেন,الْمُؤْمِنُ يَأْلَفُ وَلاَ خَيْرَ فِيمَنْ لاَ يَأْلَفُ وَلاَ يُؤْلَفُ- 'মুসলিম ভালোবাসা ও সহানুভূতির কেন্দ্রস্থল। তার মধ্যে কোন কল্যাণ নেই, যে ব্যক্তি অন্যকে ভালোবাসে না এবং অন্য মুসলিমও তার প্রতি ভালোবাসার দৃষ্টি নিক্ষেপ করে না'।[33] তিনি আরও বলেন,مَنْ مَّنَحَ مَنِيحَةَ لَبَنٍ أَوْ وَرِقٍ أَوْ هَدَى زُقَاقًا كَانَ لَهُ مِثْلُ عِتْقِ رَقَبَةٍ- 'যে ব্যক্তি দুগ্ধবতী পশু দান করে বা অর্থ দান করে অথবা গলিপথ চিনিয়ে দেয়, তার জন্য রয়েছে একটি দাস মুক্ত করার সম পরিমাণ ছওয়াব'।[34]

উক্ত মর্মে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,إِنَّ مِنْ خِيَارِكُمْ أَحْسَنَكُمْ أَخْلاَقًا- 'তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ঐ ব্যক্তি, যে চরিত্রের দিক দিয়ে সর্বোত্তম'।[35] আর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ছিলেন সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী। যেমন আল্লাহ বলেন,وَإِنَّكَ لَعَلى خُلُقٍ عَظِيمٍ- 'আর নিশ্চয়ই তুমি মহান চরিত্রের অধিকারী' (ক্বলম ৬৮/৪)। তিনি বলেন, بُعِثْتُ لأُتَمِّمَ مَكَارِمَ الأَخْلاَقِ- 'আমি প্রেরিত হয়েছি সর্বোত্তম চরিত্রকে পূর্ণতা দানের জন্য'।[36]

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,مَا مِنْ شَىْءٍ يُوضَعُ فِى الْمِيزَانِ أَثْقَلُ مِنْ حُسْنِ الْخُلُقِ وَإِنَّ صَاحِبَ حُسْنِ الْخُلُقِ لَيَبْلُغُ بِهِ دَرَجَةَ صَاحِبِ الصَّوْمِ وَالصَّلاَةِ- 'ক্বিয়ামতের দিন মীযানের পাল্লায় সবচেয়ে ভারী হবে বান্দার সচ্চরিত্রতা। আর নিশ্চয় সুন্দর আচরণের অধিকারী ব্যক্তি তার সুন্দর আচরণের বিনিময়ে নফল ছিয়াম ও নফল ছালাত আদায়কারীর মর্যাদা লাভ করবে'।[37] রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হয়, কোন বস্ত্ত মানুষকে সবচেয়ে বেশী জান্নাতে প্রবেশ করাবে? জওয়াবে তিনি বলেন, تَقْوَى اللهِ وَحُسْنُ الْخُلُقِ- 'আল্লাহভীরুতা ও সচ্চরিত্রতা'।[38]

(৬) 'মন্দ আচরণ মানুষের সৎকর্ম সমূহ বিনষ্ট করে দেয়'। হাদীছের শেষে এর দ্বারা আল্লাহর নিকট সর্বাধিক প্রিয় ব্যক্তিদের সর্বোত্তম আচরণের প্রতি উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। অতঃপর উদাহরণ দিয়ে রাসূল (ছাঃ) বলেন, 'সিরকা যেমন মধুকে নষ্ট করে দেয়, মন্দ আচরণ তেমনি মানুষের সৎকর্ম সমূহ বিনষ্ট করে দেয়'। এক হাঁড়ি দুধে এক ফোঁটা গো-চেনা পড়লে যেমন দুধ নষ্ট হয়ে যায়, মন্দ আচরণ বা একটি মন্দ শব্দ সমস্ত সৎকর্মকে বিনষ্ট করার জন্য যথেষ্ট।

এতে বুঝা যায় যে, যত বড় ধনী, বিদ্বান ও পদাধিকারী ব্যক্তি হউন না কেন, উত্তম আচরণের অধিকারী না হ'লে তার সবকিছু বরবাদ হবে।

অতএব প্রত্যেক মুমিনেরই আল্লাহর নিকট সর্বাধিক প্রিয় হওয়ার জন্য উপরোক্ত গুণাবলী সর্বতোভাবে অর্জন করা উচিৎ। আল্লাহ আমাদেরকে তাওফীক দান করুন- আমীন!


[1]. ত্বাবারাণী আওসাত্ব হা/৬০২৬; ছহীহাহ হা/৯০৬।

[2]. বুখারী হা/৩৮, ৩৭; মুসলিম হা/৭৬০, ৭৫৯; মিশকাত হা/১৯৫৮, রাবী আবু হুরায়রা (রাঃ)।

[3]. মুসলিম হা/২৬৯৯; তিরমিযী হা/১৪২৫; মিশকাত হা/২০৪, রাবী আবু হুরায়রা (রাঃ)।

[4]. মুসলিম হা/৭৮৩; মিশকাত হা/১২৪২, রাবী আয়েশা (রাঃ)।

[5]. বুখারী হা/৬৯৮২; মিশকাত হা/৫৮৪১, রাবী আয়েশা (রাঃ)।

[6]. মুসলিম হা/২৬৯৯; মিশকাত হা/২০৪, রাবী আবু হুরায়রা (রাঃ)।

[7]. বুখারী হা/৩৩২১; মুসলিম হা/২২৪৫; মিশকাত হা/১৯০২, রাবী আবু হুরায়রা (রাঃ)।

[8]. বুখারী হা/২৩৬৫; মুসলিম হা/২২৪২; মিশকাত হা/১৯০৩, রাবী আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ)।

[9]. বুখারী হা/৬০২১, রাবী জাবের বিন আব্দুল্লাহ (রাঃ); মুসলিম হা/১০০৫, রাবী হোযায়ফা (রাঃ); মিশকাত হা/১৮৯৩।

[10]. মুসলিম হা/১০০৬; মিশকাত হা/১৮৯৮, রাবী আবু যার (রাঃ)।

[11]. মুসলিম হা/১০২৮; মিশকাত হা/১৮৯১, রাবী আবু হুরায়রা (রাঃ)।

[12]. বুখারী হা/২৫৬৬; মুসলিম হা/১০৩০; মিশকাত হা/১৮৯২, রাবী আবু হুরারয়রা (রাঃ)।

[13]. মুসলিম হা/২৬২৬; মিশকাত হা/১৮৯৪, রাবী আবু যার (রাঃ)।

[14]. বুখারী হা/২৯৮৯; মুসলিম হা/১০০৯; মিশকাত হা/১৮৯৬, রাবী আবু হুরায়রা (রাঃ)।

[15]. মুসলিম হা/১০০৭; মিশকাত হা/১৮৯৭, রাবী আয়েশা (রাঃ)।

[16]. বুখারী হা/২৩২০; মুসলিম হা/১৫৫৩; মিশকাত হা/১৯০০; রাবী আনাস (রাঃ)।

[17]. মুসলিম হা/১৯১৪; মিশকাত হা/১৯০৪, রাবী আবু হুরায়রা (রাঃ)।

[18]. মুসলিম হা/২৬১৮; মিশকাত হা/১৯০৬, রাবী আবু বারযাহ (রাঃ)।

[19]. বুখারী হা/৬০২২; মুসলিম হা/১০০৮; মিশকাত হা/১৮৯৫, রাবী আবু মূসা আশ'আরী (রাঃ)।

[20]. তিরমিযী হা/১৯৫৬; ছহীহ ইবনু হিববান হা/৫২৯; মিশকাত হা/১৯১১, রাবী আবু যার (রাঃ); ছহীহাহ হা/৫৭২।

[21]. দায়লামী, ছহীহাহ হা/২৭১৫।

[22]. বুখারী হা/১৪৬৬; মুসলিম হা/১০০০ (৪৫); মিশকাত হা/১৯৩৪, রাবী যয়নব (রাঃ)।

[23]. মুসলিম হা/৯৯৪; মিশকাত হা/১৯৩২, রাবী ছাওবান (রাঃ)।

[24]. বুখারী হা/৬০২০; মিশকাত হা/১৯৩৬, রাবী আয়েশা (রাঃ)।

[25]. আহমাদ হা/১৬২৭২; তিরমিযী হা/৬৫৮; মিশকাত হা/১৯৩৯, রাবী সালমান বিন 'আমের (রাঃ)।

[26]. আবুদাঊদ হা/৪৭৭৭; তিরিমিযী হা/২০২১; মিশকাত হা/৫০৮৮, রাবী সাহ'ল বিন মু'আয (রাঃ)।

[27]. বুখারী হা/৬১১৬; মিশকাত হা/৫১০৪, রাবী আবু হুরায়রা (রাঃ)।

[28]. বুখারী, ফাৎহুল বারী হা/৪৩১৫; মিশকাত হা/৪৮৯৫, ৫৮৮৯। ছহীহ মুসলিমে আববাস (রাঃ) বর্ণিত হাদীছে (হা/১৭৭৫) ফারওয়া আল-জুযামী প্রদত্ত সাদা খচ্চরের কথা বলা হয়েছে। ইবনু সা'দ সহ অনেক জীবনীকার মুক্বাউক্বিস প্রদত্ত সাদা-কালো ডোরা কাটা 'দুলদুল' খচ্চরের কথা বলেছেন। ইবনু হাজার প্রথমটিকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন (ঐ)

[29]. দ্র. সীরাতুর রাসূল (ছাঃ) ৩য় মুদ্রণ 'গণীমত বণ্টনে অসন্তুষ্ট ব্যক্তিগণ' অনুচ্ছেদ।

[30]. বুখারী হা/৬১১৪; মুসলিম হা/২৬০৯; মিশকাত হা/৫১০৫, রাবী আবু হুরায়রা (রাঃ)।

[31]. ত্বাবারাণী, আওসাত্ব হা/২৩৫৩; ছহীহুত তারগীব হা/২৭৪৯।

[32]. মুসলিম হা/২৬৯৯; মিশকাত হা/২০৪, রাবী আবু হুরায়রা (রাঃ)।

[33]. আহমাদ হা/৯১৮৭; মিশকাত হা/৪৯৯৫, রাবী আবু হুরায়রা (রাঃ);  ছহীহাহ হা/৪২৬।

[34]. আহমাদ হা/১৪৬৩৯; তিরমিযী হা/১৯৫৭, সনদ 'ছহীহ', রাবী জাবের বিন আব্দুল্লাহ (রাঃ)।

[35]. বুখারী হা/৩৫৫৯; মিশকাত হা/৫০৭৫, রাবী আব্দুল্লাহ বিন 'আমর (রাঃ)।

[36]. হাকেম হা/৪২২১, ২/৬৭০, রাবী আবু হুরায়রা (রাঃ)।

[37]. তিরমিযী হা/২০০৩, রাবী আবুদ দারদা (রাঃ); ছহীহাহ হা/৮৭৬।

[38]. তিরমিযী হা/২০০৪; মিশকাত হা/৪৮৩২, রাবী আবু হুরায়রা (রাঃ); ছহীহাহ হা/৯৭৭।

Google Ads

Google Ads

Google Ads

Google Ads

Newer Posts Newer Posts Older Posts Older Posts

Related Posts

Google Ads

Comments

Post a Comment
Loading comments...